শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে সহীহ ও জাল হাদীস
ইসলামে নফল রোজার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো শাওয়াল মাসের ছয় রোজা। এ সম্পর্কে অনেক মুসলমানের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও, অনেক সময় বিভিন্ন ভুল তথ্য, জাল হাদীস বা অতিরঞ্জিত ফযীলতের কথা প্রচলিত থাকে।
এই প্রবন্ধে আমরা সহজ ভাষায় আলোচনা করবো শাওয়াল মাসের রোজার সহীহ ও জাল হাদীস সম্পর্কে
শাওয়াল মাস: এক নজরে
শাওয়াল মাস হল হিজরি বছরের দশম মাস এবং হজ্জের মাসগুলোর প্রথম মাস। ঈদুল ফিতরের পরেই এই মাস শুরু হয়। এ মাসে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল—বিশেষ করে ছয়টি রোজা পালন।
সহীহ হাদীসের আলোকে শাওয়াল মাসের ছয় রোজা
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোজা রাখে, তারপর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখে, সে যেন পুরো বছরের রোজা রাখলো।”
(সহীহ মুসলিম, হাদীস: 1164)
এই হাদীসটি স্পষ্টভাবে শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস হিসাবে প্রমাণ করে যে, শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এটি নফল ইবাদত এবং কেউ ধারাবাহিকভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে রাখতে পারেন।
যয়ীফ ও জাল হাদীস: সাবধানতা জরুরি
দুঃখজনকভাবে অনেক বই-পুস্তকে শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস নামে কিছু ভিত্তিহীন কথা লেখা হয়েছে। যেমন:
- “শাওয়াল মাসে রোজা রাখলে শহীদের মর্যাদা পাওয়া যাবে”
- “প্রত্যেক রোজার বিনিময়ে হাজার রোজার সওয়াব”
- “শাওয়ালে রোজা রাখলে দোজখ হারাম হয়ে যায়”
- “লাল ইয়াকুতের বাড়ি ও দুধ-মধুর নহর দেওয়া হবে”
এইসব কথা বানোয়াট হাদীস। এগুলো রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নামে বানানো হয়েছে। কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায় না। বরং আলেমগণ এদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছেন।
ঈদুল ফিতরের দিনে ও রাতে বিশেষ সালাত?
কিছু প্রচলিত গল্পে বলা হয়, “ঈদের রাতে ১০০ রাক’আত নামায পড়লে সমস্ত গুনাহ মাফ হবে।” আবার ঈদের পরে ৪ রাক’আতের সালাতের বিশেষ সওয়াবের কথা বলা হয়। এগুলোর কোনোটিরই সহীহ ভিত্তি নেই।
শাওয়াল মাসে করণীয়
✔ রমযানের রোজার পর শাওয়াল মাসের ছয় রোজা রাখুন
✔ তাহাজ্জুদ, চাশত, যিকির, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত—এসব নিয়মিত করুন
✔ সাপ্তাহিক (সোম ও বৃহস্পতিবার) ও মাসিক (১৩, ১৪, ১৫ তারিখ) রোজা রাখতে পারেন
✔ জাল হাদীস বা অতিরঞ্জিত গল্পে কান দেবেন না
উপসংহার
শাওয়াল মাসের রোজা সম্পর্কে হাদিস থেকে আমরা জানতে পারি, এই ছয়টি রোজার ফযীলত একেবারে সহীহ ও নির্ভরযোগ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তবে, অনেক জাল ও বানানো কথা সমাজে প্রচলিত রয়েছে, যা থেকে আমাদের সতর্ক থাকা জরুরি। ইসলাম সহজ ও পরিস্কার ধর্ম—এখানে বাড়তি কিছু বানানোর প্রয়োজন নেই।
আসুন, আমরা সত্য ও সহীহ হাদীস অনুসারে আমাদের ইবাদত করি, এবং সমাজে সঠিক তথ্য প্রচার করি।