১৮টি অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস
এই আর্টিকেলে আমরা কিছু সেরা অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলোর মাধ্যমে আপনি বাড়তি কিছু টাকা আয় করতে পারবেন অথবা চাইলে ফুলটাইম রোজগারও করতে পারবেন।
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন আর প্রযুক্তির কল্যাণে টাকা ইনকাম আগের চেয়ে অনেক সহজ হয়ে গেছে। অনলাইনে এমন অনেক প্ল্যাটফর্ম আর অ্যাপস আছে যা আপনাকে অনলাইন আয়ে সাহায্য করতে পারে।
১৮টি অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস
আমরা অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপসগুলোকে চারটি প্রধান ভাগে ভাগ করেছি:
- দীর্ঘমেয়াদী ফ্রিল্যান্সিং সাইট
- স্বল্পমেয়াদী কাজের সাইট
- ডেলিভারি ও ট্যাক্সি অ্যাপস
- জিনিসপত্র বিক্রি করার অ্যাপস
দ্রুত টাকা ইনকাম করার জন্য এই অ্যাপসগুলোর প্রত্যেকটির কাজের ধরণ, কিভাবে শুরু করতে হবে এবং আপনি কত টাকা আয় করতে পারবেন সে সম্পর্কে আমরা একটি ধারণা দেব।
দীর্ঘমেয়াদী ফ্রিল্যান্সিং সাইট
চলুন, দীর্ঘমেয়াদী এবং প্রকল্প-ভিত্তিক ফ্রিল্যান্সিং অ্যাপসগুলোর দিকে একবার চোখ বুলানো যাক। যেগুলোর মাধ্যমে ভালো পরিমাণের টাকা আয়ের সুযোগ পাবেন।
১. আপওয়ার্ক (Upwork)
আপওয়ার্ক হলো একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা বিভিন্ন ব্যবসার সাথে ফ্রিল্যান্সারদের সংযোগ স্থাপন করে, যারা বিভিন্ন ধরনের কাজ ও সেবা প্রদান করে থাকে। এটি দূরবর্তী কাজের (remote work) অনেক সুযোগ দিয়ে থাকে এবং ব্যবহারকারীদের তাদের কাজ ও পেমেন্ট পরিচালনা করতে সাহায্য করে।
আপওয়ার্কে যোগ দিতে হলে আপনাকে একটি প্রোফাইল তৈরি করতে হবে এবং একটি আবেদন জমা দিতে হবে। তাদের কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড থাকার কারণে আপনার আবেদন গৃহীত নাও হতে পারে, যদিও সেই মানদণ্ডগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানা যায় না। তবে, সাধারণত প্রক্রিয়াটি বেশ সহজ।
আপওয়ার্কের একটি নিবন্ধে উল্লেখ করা গবেষণা অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফ্রিল্যান্সাররা গড়ে প্রতি ঘন্টায় ২০ ডলার আয় করে। কিছু বিশেষ পেশায় এই আয় ঘন্টায় ২৮ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। যদিও আপওয়ার্কে ভালো রোজগার করা সম্ভব, তবে এর পাশাপাশি কিছু সার্ভিস চার্জও কাটে, যা আপনার বিবেচনায় রাখা উচিত।
আপনার আয় করা অর্থ উত্তোলনের জন্য এখানে অনেক উপায় আছে, যেমন – সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার, ওয়্যার ট্রান্সফার। এছাড়াও, যেকোন দেশ থেকে ডলার তোলার জন্য আপওয়ার্কে Wis), PayPal, Payoneer এবং M-Pesa-এর মতো বিভিন্ন তৃতীয় পক্ষের পেমেন্ট সেবাদানকারীও রয়েছে।
২. ফাইভার (Fiverr)
ফাইভার হলো একটি ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস যা ফ্রিল্যান্সারদের সেইসব ক্লায়েন্টদের সাথে যুক্ত করে যারা গ্রাফিক ডিজাইন, লেখালেখি এবং প্রোগ্রামিং-এর মতো বিভিন্ন সেবা খুঁজে থাকেন। এটি ব্যবসা এবং ব্যক্তিগতভাবে যারা পেশাদার কাজ করাতে চান তাদের জন্য সাশ্রয়ী এবং কার্যকর সমাধান সরবরাহ করে।
ফাইভারে কাজ শুরু করার জন্য, আপনাকে একটি সেলার প্রোফাইল এবং একটি গিগ তৈরি করতে হবে। গিগ হলো সেইসব সার্ভিস যা আপনি ফাইভারে বিক্রি করতে চান।
তাদের ওয়েবসাইট অনুসারে, একটি গিগ তৈরি করা হলো “আপনার প্রতিভা দেখানোর এবং ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য সরবরাহ করার সুযোগ, যা তাদেরকে আপনার সাথে ব্যবসা করার সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
Earnest কর্তৃক প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, একজন ফাইভার ব্যবহারকারী প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০৩ ডলার আয় করে। আর মধ্যবর্তী আয় হলো প্রতি মাসে ৬০ ডলার।
৩. ফ্রিল্যান্সার ডটকম (Freelancer.com)
ফ্রিল্যান্সার ডটকম একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম যা বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে দক্ষ ফ্রিল্যান্সারদের সংযোগ স্থাপন করে, যারা বিভিন্ন প্রকার প্রকল্পে সেবা প্রদানে সক্ষম। এই প্ল্যাটফর্মটি ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সহায়ক এবং স্বতন্ত্র কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।
তাদের পরিষেবাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ওয়েব ডিজাইন, কনটেন্ট রাইটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এবং সফটওয়্যার প্রোগ্রামিং।
ফ্রিল্যান্সার ডটকমে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রোফাইল তৈরি করা যায়। অ্যাকাউন্টে একটি সক্রিয় ফেসবুক প্রোফাইল অথবা ইমেল অ্যাড্রেস সংযুক্ত করা আবশ্যক। এছাড়াও, একটি ইউজারনেম নির্বাচন করতে হয়, যা পরবর্তীতে অপরিবর্তনীয়।
ফ্রিল্যান্সার ডটকম ফ্রিল্যান্স কর্মীদের একটি বৃহৎ নেটওয়ার্ক। পূর্বের আলোচনা অনুযায়ী, এই প্ল্যাটফর্মে একজন ফ্রিল্যান্সারের গড় ঘণ্টাপ্রতি আয় ২০ মার্কিন ডলার হতে পারে।
৪. টপটেল (Toptal)
টপটেল হলো একটা বাছাই করা প্ল্যাটফর্ম, যা সারা বিশ্বের সেরা ফ্রিল্যান্সারদের সাথে বিভিন্ন ব্যবসার যোগাযোগ করিয়ে দেয়। এদের খুব কঠিন একটা বাছাই প্রক্রিয়া আছে, যার ফলে ক্লায়েন্টরা তাদের কাজের জন্য একদম সেরা আর অভিজ্ঞ লোক পান।
তাদের ওয়েবসাইটে বলা আছে, “সফল টপটেল ফ্রিল্যান্সারদের সাধারণত কমপক্ষে ২-৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা, দারুণ যোগাযোগের দক্ষতা থাকতে হয়। এতে তারা খুব তাড়াতাড়ি যেকোনো নতুন কাজ ধরে ফেলতে পারে।” এখানে কাজ পেতে হলে আপনাকে একটা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে, যাতে কয়েক সপ্তাহও লেগে যেতে পারে।
কেরিয়ার কর্মা আর গ্লাসডোর জানাচ্ছে, টপটেলের ফ্রিল্যান্সাররা বছরে প্রায় ৫০,৩৫৫ ডলার থেকে $২,৩৪,৩৬৮ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে। এটা নির্ভর করে আপনার কাজের ক্ষেত্র, আপনি ঘন্টায় কত টাকা চান এবং আপনি কতটা ও কেমন কাজ করছেন তার ওপর।
৫. ফ্লেক্সজবস (FlexJobs)
ফ্লেক্সজবস হলো একটা কাজ খোঁজার ওয়েবসাইট, যেখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের ফ্লেক্সিবল আর রিমোট কাজের সুযোগ খুঁজে নিতে পারবেন। তাদের লক্ষ্য হলো যারা কাজের পাশাপাশি ব্যক্তিগত জীবনকেও গুরুত্ব দিতে চান, তাদের এমন সব কোম্পানির সাথে যুক্ত করা যারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং-এর সুযোগ দেয়।
এখানে কাজ শুরু করতে হলে, আপনাকে প্রথমে সাইন আপ করতে হবে এবং আপনার জীবনবৃত্তান্তের একটা প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এটা করলে আপনি ভালো ভালো ফিচার্ড চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং তাদের অটোমেটেড সিস্টেম আপনাকে নতুন “আগ্রহের কাজ”-এর খোঁজ দেবে, যেগুলো সম্প্রতি তাদের ডেটাবেজে যোগ হয়েছে।
গ্লাসডোরের ব্যবহারকারীরা জানাচ্ছেন যে এখানে গড় বেতন বছরে ৩০,০০০ ডলার থেকে ৮০,০০০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে। তবে যারা উঁচু পদে আছেন এবং বিশেষ দক্ষতা রাখেন, তারা বছরে ১,০০,০০০ ডলার এরও বেশি আয় করতে পারেন।
অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস হিসেবে উপরের ৫টি যেকোন মানুষের প্রথম পছন্দের তালিকায় থাকবে। কারণ, এই অ্যাপগুলো দিয়ে ভালো পরিমানের ইনকাম করা সম্ভব।
স্বল্পমেয়াদী কাজের সাইট
এই তালিকায় এমন কিছু অ্যাপস রয়েছে যা আপনাকে টাকার বিনিময়ে ছোট ছোট কাজ সম্পন্ন করতে সাহায্য করতে পারে।
এই লিস্টে এমন কিছু অ্যাপের নাম আছে, যেগুলোর মাধ্যমে আপনারা ছোটখাটো কিছু কাজ করে টাকা আয় করতে পারবেন। মানে, যখন আপনার একটু ফ্রি সময় আছে, তখন এই অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপগুলো ব্যবহার করে কিছু বাড়তি রোজগার করা যেতে পারে।
৬. আইবট্টা (Ibotta)
আইবট্টা হলো একটা ক্যাশ-ব্যাক অ্যাপ। এর মানে হলো, আপনি যদি তাদের সাথে যুক্ত থাকা কোনো দোকানে কেনাকাটা করেন এবং আপনার bill স্ক্যান করে অ্যাপে জমা দেন, তাহলে আপনি কিছু টাকা ফেরত পাবেন।
যারা কেনাকাটা করার সময় কিছু টাকা সাশ্রয় করতে চান, তাদের জন্য এটা বেশ কাজের একটা জিনিস। আর এর বিভিন্ন ধরনের রিওয়ার্ড অপশন থাকার কারণে এটা অনেকের কাছেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আইবট্টার ওয়েবসাইটে বলা আছে: “আইবট্টা ব্যবহার শুরু করতে হলে, আপনার একটা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট থাকতে হবে এবং একটা পেপাল অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। এছাড়াও, যদি কেউ সরাসরি টাকা না নিয়ে গিফট কার্ড নিতে চান, তাহলে কিছু নির্দিষ্ট দোকান থেকে রিওয়ার্ড জমা করে সেই গিফট কার্ডও নিতে পারেন।”
এই অ্যাপ নিয়ে একটা রিভিউতে বলা হয়েছে যে “আইবট্টা ব্যবহার করে প্রতি মাসে ২০ ডলার আয় করা সম্ভব।”
৭. রাকুতেন (Rakuten)
রাকুতেন হলো একটা খুব পরিচিত ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম এবং অ্যাপ, যেখানে বিভিন্ন দোকান থেকে অনেক রকমের জিনিসপত্র কেনা যায়। এছাড়াও, এখানে ব্যবহারকারীদের জন্য বিভিন্ন অফার আর ডিসকাউন্ট থাকে। এদের একটা ক্যাশব্যাক প্রোগ্রামও আছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের কেনাকাটার ওপর কিছু টাকা ফেরত পেতে পারেন।
রাকুতেনে যোগ দেওয়া একদম ফ্রি। শুধু একটা ইমেল আর পাসওয়ার্ড লাগবে, অথবা আপনি আপনার ফেসবুক প্রোফাইল, গুগল অ্যাকাউন্ট বা অ্যাপল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেও সাইন আপ করতে পারেন।
রাকুতেন থেকে নির্দিষ্টভাবে কত আয় করা যায়, সেই বিষয়ে তেমন তথ্য পাওয়া যায় না। তবে CNBC জানাচ্ছে যে নতুন ব্যবহারকারীরা তাদের সদস্য হওয়ার প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে ২৫ ডলার খরচ করলে ১০ ডলার বোনাস পেতে পারেন। এছাড়াও, তারা প্রতি ৩ মাস অন্তর চেক বা পেপালের মাধ্যমে ক্যাশব্যাক পাঠিয়ে থাকে।
৮. সুয়াগবাকস (Swagbucks)
Swagbucks হলো একটা জনপ্রিয় রিওয়ার্ডস অ্যাপ, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা বিভিন্ন কাজ করে পয়েন্ট জমা করতে পারে। এই কাজগুলোর মধ্যে আছে সার্ভে করা আর ভিডিও দেখা।
পরে এই পয়েন্টগুলো ব্যবহার করে গিফট কার্ড বা টাকা পাওয়া যায়। ফোন ব্যবহার করার সময় কিছু বাড়তি টাকা রোজগার করার এটা একটা মজার আর সহজ উপায়।
Swagbucks-এ আপনি অনলাইনে বা তাদের অ্যাপের মাধ্যমে যোগ দিতে পারেন। তাদের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, “আপনার Swagbucks অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে সম্ভবত ৪৫ থেকে ৬০ সেকেন্ডের মতো সময় লাগবে।”
Swagbucks-এর ওয়েবসাইটেই বলা আছে: “বেশিরভাগ Swagbucks সদস্য বছরে কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়তি আয় করতে পারে।” দৈনিক আয়ের ব্যাপারে তারা বলছে: “বেশিরভাগ Swagbucks সদস্য প্রতিদিন ১ ডলার থেকে ৫ ডলার বা বছরে ৩৬৫ ডলার থেকে ১,৮২৫ ডলার আয় করতে পারে।
কিছু অফার আছে যেখানে ৫০ ডলার থেকে ২৫০ ডলার পর্যন্ত পাওয়া যায়, তবে সাধারণত প্রতিদিনের আয় ১ ডলার থেকে ৫ ডলারের মধ্যেই থাকে।”
৯. সার্ভে জাঙ্কি (Survey Junkie)
সার্ভে জাঙ্কি হলো একটা সার্ভে করার প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ব্যবহারকারীরা অনলাইনে সার্ভে পূরণ করে টাকা আয় করতে পারে। এটা বাজার গবেষণা সংস্থাগুলোকে সাধারণ মানুষের সাথে যুক্ত করে এবং উভয় পক্ষকেই পুরষ্কার দিয়ে থাকে।
সার্ভে জাঙ্কিতে সাইন আপ করার সময়, আপনি তাদের এক বা উভয় তথ্য সংগ্রহ সার্ভিসের জন্য সাইন আপ করার সুযোগ পাবেন। SJ Opinion হলো তাদের সাধারণ সার্ভে এবং ফোকাস গ্রুপের অপশন। আর SJ Pulse আপনার ব্রাউজিং-এর তথ্য সংগ্রহ করে।
Money Done Right ব্লগের তথ্য অনুযায়ী, এখানে সার্ভে করে ঘন্টায় গড়ে ৩.১৮ ডলার আয় করা যায়। তবে কিছু সময় সার্ভের জন্য যোগ্য না হওয়ায় সময় নষ্ট হতে পারে। ফোকাস গ্রুপে সম্ভবত আরও বেশি আয় করা যায়, তবে এর কোনো নির্দিষ্ট গড় হিসাব নেই।
১০. টাস্কর্যাবিট (Taskrabbit)
টাস্কর্যাবিট হলো একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যা স্থানীয় ফ্রিল্যান্সারদের সাথে সেইসব মানুষদের যোগাযোগ করিয়ে দেয় যাদের বিভিন্ন ছোটখাটো কাজ বা নিত্যদিনের কাজ করার জন্য সাহায্য দরকার। ব্যবহারকারীরা এখানে তাদের কাজের বিবরণ পোস্ট করতে পারে, নিজেদের বাজেট জানাতে পারে এবং একজন “Tasker” বা যে কাজটা করে দেবে থাকে ভাড়া করতে পারে।
টাস্কার হতে হলে, আপনাকে টাস্কার অ্যাপ ডাউনলোড করতে হবে, একটা অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং দরকারি তথ্য দিয়ে একটা প্রোফাইল বানাতে হবে। এছাড়াও, আইডি কার্ড ও নিজের ছবি দিয়ে আপনার পরিচয় নিশ্চিত করতে হবে।
আর্নেস্টের তথ্য অনুযায়ী, টাস্কর্যাবিট এর ব্যবহারকারীরা গড়ে প্রতি মাসে ৩৮০ ডলার আয় করে। তবে বেশিরভাগ মানুষের আয় এর থেকে কম, যা প্রায় ১১০ ডলারের মতো।
ডেলিভারি ও ট্যাক্সি অ্যাপস
এখানে আমেরিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় ডেলিভারি ও ট্যাক্সি সংক্রান্ত অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপসগুলো তুলে ধরা হলো।
১১. উবার (Uber)
উবার হলো একটা খুব পরিচিত ট্রান্সপোর্টেশন অ্যাপ, যা ব্যবহারকারীদের সাথে তাদের এলাকার ড্রাইভারদের যুক্ত করে, যখন তাদের গাড়ি দরকার হয়। এটা পুরনো দিনের ট্যাক্সি সার্ভিসের একটা সহজ বিকল্প।
এই কাজটা করতে হলে আপনার অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এছাড়াও, চার দরজার গাড়ি, গাড়ির ইন্স্যুরেন্স, আপনার ঠিকানার প্রমাণপত্র এবং ১-৩ বছরের ড্রাইভিং-এর অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
আর্নেস্টের তথ্য অনুযায়ী, উবার ড্রাইভাররা গড়ে প্রতি মাসে ৩৬৪ ডলার আয় করে। তবে বেশিরভাগ ড্রাইভারের আয় এর থেকে কম, যা প্রায় ১৫৫ ডলারের মতো।
১২. লিফট (Lyft)
লিফট হলো এমন একটা অ্যাপ যার মাধ্যমে আপনি যখন কোথাও যেতে চান, তখন কাছাকাছি থাকা ড্রাইভারদের ডাকতে পারেন। এটা অনেকটা পুরনো দিনের ট্যাক্সি সার্ভিসের মতোই, তবে এটা আরও সহজ আর সাশ্রয়ী। যাদের নিজেদের গাড়ি নেই বা যারা সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে চান, তাদের জন্য এটা খুব কাজের একটা জিনিস।
উবারের মতো লিফটেও গাড়ি চালাতে হলে আপনার অবশ্যই একটা লিগ্যাল ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকতে হবে। এরপর আপনার ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হবে মানে আপনি আগে কোনো ঝামেলায় ছিলেন কিনা সেটা দেখা হবে।
একটা গাড়ি ও গাড়ির ইন্স্যুরেন্সের মতো জরুরি কাগজপত্র লাগবে। গাড়িটা আপনার নিজের হতে পারে, অথবা আপনি চাইলে ভাড়া করা গাড়িও ব্যবহার করতে পারেন।
আর্নেস্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, লিফটের ড্রাইভাররা প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৩৩৭ ডলারের মতো আয় করেন। তবে বেশিরভাগ ড্রাইভারের আয় এর থেকে একটু কম, যা প্রায় ২১০ ডলারের কাছাকাছি।
১৩. ডোরড্যাশ (DoorDash)
ডোরড্যাশ হলো একটা খাবার ডেলিভারি করার অ্যাপ। এর মাধ্যমে আপনি আপনার এলাকার রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার অর্ডার করতে পারবেন এবং তারা সেই খাবার আপনার দরজায় পৌঁছে দেবে।
আপনি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের মেনু দেখতে পারবেন, অর্ডার করতে পারবেন এবং আপনার অর্ডার কোথায় আছে সেটাও ট্র্যাক করতে পারবেন।
ডোরড্যাশে ডেলিভারি করার জন্য ড্যাশারদের বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে, তাদের নিজস্ব গাড়ি থাকতে হবে এবং আইডি ও সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বারের মতো কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
আর্নেস্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ডোরড্যাশের ড্যাশাররা গড়ে প্রতি মাসে ২২৯ ডলারের মতো আয় করেন। তবে বেশিরভাগের আয় এর থেকে কম, যা প্রায় ১০০ ডলারের কাছাকাছি।
১৪. ইনস্টাকার্ট (Instacart)
ইনস্টাকার্ট হলো একটা গ্রোসারি বা মুদিপণ্য ডেলিভারি করার অ্যাপ। এর মাধ্যমে আপনি আপনার পছন্দের দোকান থেকে গ্রোসারি অর্ডার করতে পারবেন এবং তারা সেই জিনিসপত্র আপনার বাড়িতে পৌঁছে দেবে। যারা খুব ব্যস্ত থাকেন অথবা দোকানে যেতে পারেন না, তাদের জন্য এটা খুবই কাজের এবং সময় বাঁচানো একটা সমাধান।
ইনস্টাকার্টের শপার (যারা ডেলিভারি করে) হতে হলে, আপনার বয়স ১৮ বছরের বেশি হতে হবে এবং আমেরিকাতে কাজ করার অনুমতি থাকতে হবে। এছাড়াও, আপনার একটা গাড়ি, ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং একটা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে।
Route4Me ব্লগের তথ্য অনুযায়ী, ইনস্টাকার্টের শপাররা গড়ে ঘন্টায় ১১ থেকে ১৬ ডলার অথবা প্রতি ট্রিপে ১৬.০৬ ডলার আয় করে।
জিনিসপত্র বিক্রি করার অ্যাপস
যুক্তরাষ্ট্রে পুরনো জিনিসপত্র কেনার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। আর এই আগ্রহের মানে হলো, আপনিও আপনার পুরনো জিনিস বিক্রি করে কিছু বাড়তি টাকা আয় করতে পারেন।
১৫. পোশমার্ক (Poshmark)
পোশমার্ক হলো একটা ফ্যাশন মার্কেটপ্লেস অ্যাপ, যেখানে ব্যবহারকারীরা নতুন অথবা পুরনো পোশাক, অ্যাক্সেসরিজ (যেমন – গয়না, ব্যাগ) এবং ঘরের জিনিসপত্র কেনা-বেচা করতে পারে।
এটা অনেকটা সোশ্যাল মিডিয়ার মতো, যেখানে আপনি অন্য ব্যবহারকারীদের ফলো করতে পারবেন, আপনার জিনিসপত্র আপনার ফলোয়ারদের সাথে শেয়ার করতে পারবেন এবং ভার্চুয়াল শপিং পার্টিতে যোগ দিতে পারবেন।
পোশমার্ক প্রো টুলস ব্লগের তথ্য অনুযায়ী, একজন সাধারণ সেলার “মাসে প্রায় ৫০০ ডলার আয় করতে পারে।” আর যারা এটাকে ফুল-টাইম কাজ হিসেবে নেয়, তারা মাসে ৫,০০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে।
১৬. ফেসবুক মার্কেটপ্লেস (Facebook Marketplace)
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস হলো একটা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে লোকজন তাদের কাছাকাছি থাকা জিনিসপত্র ও সার্ভিস কেনা-বেচা করতে পারে। এটা ব্যবহারকারীদের জন্য তাদের এলাকার সম্ভাব্য ক্রেতা বা বিক্রেতাদের সাথে যোগাযোগের একটা সহজ উপায়।
মার্কেটপ্লেসে বিক্রি শুরু করতে হলে ব্যবহারকারীদের একটা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। ফেসবুকের পরামর্শ হলো বিক্রেতাদের নিজেদের তোলা ছবি ব্যবহার করা উচিত, জিনিসের সঠিক বর্ণনা দেওয়া উচিত, কেনার আসল কাগজপত্র দেওয়া উচিত, জিনিসের দাম ঠিক রাখা উচিত, ব্যবহারকারীদের সাথে ভালোভাবে কথা বলা উচিত এবং তাদের পণ্যের ব্যাপারে সবসময় আপডেট থাকা উচিত।
ফেসবুক মার্কেটপ্লেস থেকে আপনি কত টাকা আয় করতে পারবেন তার সঠিক ধারণা পাওয়া কঠিন, কারণ এটা এলাকার ওপর অনেকখানি নির্ভর করে। তবে ক্যাপিটাল ওয়ান জানাচ্ছে যে ফেসবুকের ৪০% ব্যবহারকারী মার্কেটপ্লেস ব্যবহার করে, যা এটাকে একটা সম্ভাবনাময় মাধ্যম করে তুলেছে।
১৭. অফারআপ (OfferUp)
অফারআপ হলো একটা মোবাইল মার্কেটপ্লেস অ্যাপ, যা স্থানীয় ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করে। ব্যবহারকারীরা এই প্ল্যাটফর্মের সহজ ইন্টারফেসের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র কেনা-বেচা করতে পারে।
অফারআপে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য তাদের অ্যাপ বা ওয়েবসাইটে আপনার ইমেল, ফেসবুক, গুগল অথবা অ্যাপল আইডি ব্যবহার করে সাইন আপ করতে হবে।
সাধারণত অফারআপ থেকে কত আয় করা যায়, সেই বিষয়ে অনলাইনে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না।
১৮. ভিন্টেড (Vinted)
ভিন্টেড হলো একটা মোবাইল মার্কেটপ্লেস, যেখানে ব্যবহারকারীরা পুরনো (সেকেন্ডহ্যান্ড) পোশাক, জুতো এবং অন্যান্য ফ্যাশন অ্যাক্সেসরিজ কেনা-বেচা করতে পারে। এখানে ভার্চুয়াল ক্লোজেট (আলমারি), ব্যক্তিগত পছন্দের সুপারিশ এবং ফ্যাশন ভালোবাসেন এমন মানুষদের জন্য সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-এর মতো সুবিধাও আছে।
ভিন্টেডে অ্যাকাউন্ট খোলার পর গুগল বা ফেসবুক দিয়ে আপনার অ্যাকাউন্ট ভেরিফাই করতে হবে এবং তারা প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়।
ব্যক্তিগতভাবে কত আয় করা যায়, তা খুঁজে বের করা কঠিন। তবে প্রোডাক্টমিন্ট জানাচ্ছে যে ভিন্টেডের মূল্য ৪.৫ বিলিয়ন ডলার এবং তারা ৫৬২.৩ মিলিয়ন ডলার তহবিল সংগ্রহ করেছে, যা এটিকে একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসায়িক উদ্যোগ করে তুলেছে।
বিশেষ পরামর্শ
স্মার্টফোন আর প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে টাকা আয় করার সুযোগ বেড়েছে। এই আর্টিকেলে ১৮টি জনপ্রিয় অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, যেগুলোকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়: দীর্ঘমেয়াদী ফ্রিল্যান্সিং সাইট, স্বল্পমেয়াদী কাজের সাইট, ডেলিভারি ও ট্যাক্সি অ্যাপস এবং পুরনো জিনিস বিক্রির অ্যাপস।
ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলোতে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্টের মাধ্যমে ঘন্টায় কিছু ডলার আয় করা সম্ভব, তবে এর জন্য দক্ষতা ও সময়ের প্রয়োজন। স্বল্পমেয়াদী কাজের অ্যাপসগুলো ছোট ছোট টাস্ক পূরণ করে বাড়তি কিছু রোজগার করার সুযোগ দেয়।
ডেলিভারি ও ট্যাক্সি অ্যাপসের মাধ্যমে যারা গাড়ি বা অন্য যানবাহন চালান, তারা প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় করতে পারেন। আর পুরনো জিনিস বিক্রির অ্যাপসগুলো অব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করে কিছু টাকা লাভ করার সুযোগ করে দেয়।
আশা করছি অনলাইনে টাকা ইনকাম করার অ্যাপস সমন্ধে ভালো একটা আইডিয়া পেয়েছেন। এ বিষয়ে আপনার কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন।