অনলাইনে সার্ভে করে ইনকাম করুন এই ১০টি সাইট থেকে
যারা নিজেদের ফ্রি সময়ে অনলাইনে সহজে কিছু টাকা আয় করতে চান, তাদের জন্য অনলাইনে সার্ভে করে ইনকাম করাটা খুবই সহজ একটা উপায়।
যাদের কাছে ইন্টারনেট আছে, তারা টাকা দেয় এমন সার্ভের ওয়েবসাইটে সাইন আপ করতে পারেন। তারপর সেখানে বিভিন্ন ধরনের সার্ভে সম্পন্ন করে কিছু নগদ টাকা, গিফট কার্ড বা অন্য পুরস্কার পেতে পারেন।
প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ তাদের অফিসের ফাঁকে, টিভি দেখার সময় বা যখন কোনো কাজ থাকে না, তখন এই সুযোগটা নেয়। কারণ সার্ভে শুরু করতে তেমন কিছুই লাগে না আর এটি নিজের ইচ্ছামতো সময়ে করা যায়।
সার্ভে করে ইনকাম করার ১০টি ওয়েবসাইট
অনলাইনে সার্ভে করে আয় করার সুযোগ আছে, তবে এর ফলাফল নির্ভর করে আপনার ব্যবহৃত সাইট, সার্ভের ধরন এবং সময়ের ওপর। সাধারণত, প্রতি সার্ভেতে ১ থেকে ৫ ডলার আয় হয়, যদিও কিছু ক্ষেত্রে ৫০ ডলার বা তার বেশি পাওয়া যেতে পারে।
আপনার বয়স, লোকেশন এবং ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর নির্ভর করে সার্ভে করার সুযোগ ভিন্ন হতে পারে। সার্ভেগুলো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হয় – পণ্য পর্যালোচনা, রাজনৈতিক মতামত, বা আচরণগত গবেষণা।
বিশ্বাসযোগ্য এবং নির্ভরযোগ্য সাইট বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সব সাইট টাকা দেয় না বা নিয়মিত কাজ সরবরাহ করে না। ভালো সাইটগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদী, অনেক ব্যবহারকারীর দ্বারা ব্যবহৃত এবং পরিষ্কার পেমেন্ট নীতি অনুসরণ করে। তাই প্রতারণা এড়াতে এবং আয় বাড়াতে বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন করা জরুরি।
১. সোয়াগবাক্স (Swagbucks)
সোয়াগবাক্স সত্যিই খুব পরিচিত একটা রিওয়ার্ড প্ল্যাটফর্ম। এখানে আপনি শুধু সার্ভের উত্তর দিয়েই না, বরং ভিডিও দেখে, গেম খেলে এবং অনলাইনে কেনাকাটা করেও টাকা আয় করতে পারবেন। তারা আপনাকে পেপাল বা বিভিন্ন গিফট কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করে থাকে। কত টাকা হলে আপনি তুলতে পারবেন, সেটা রিওয়ার্ডের ওপর নির্ভর করে, তবে সাধারণত ১ থেকে ৫ ডলার হলেই তোলা যায়।
যারা নতুন করে অনলাইন থেকে সার্ভে করে টাকা আয় করতে চান, তাদের জন্য এই সাইটটা বেশ ভালো। এখানে কাজ করার জন্য তেমন কোনো কঠিন দক্ষতার দরকার হয় না। আপনি শুধু আপনার ইমেল আইডি দিয়ে সাইন আপ করতে পারেন এবং আপনার সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়ে প্রোফাইল তৈরি করলেই কাজ শুরু করা যায়।
সোয়াগবাক্স আপনাকে অবসর সময়ে ছোট ছোট কিছু কাজ করার সুযোগ দেয়, যেখানে খুব বেশি খাটুনিও নেই। সাধারণত, তারা যে সার্ভেগুলো দিয়ে থাকে, সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবন যেমন – আমরা কী খাই, কী দেখি, কীভাবে কেনাকাটা করি বা নতুন টেকনোলজি কেমন লাগে – এই ধরনের বিষয় নিয়ে হয়।
আপনি হয়তো একদিনে অনেকগুলো সার্ভেতেও অংশ নিতে পারবেন, তবে কয়টা সার্ভে আপনার জন্য আসবে সেটা আপনার প্রোফাইলের তথ্যের ওপর নির্ভর করে। সব মিলিয়ে, সোয়াগবাক্স সার্ভে করে ইনকাম করার একটা ভালো সুযোগ যারা অল্প পরিশ্রমে এবং অবসর সময়ে কিছু বাড়তি টাকা আয় করতে চান ।
২. ইনবক্সডলার্স (InboxDollars)
ইনবক্সডলার্সও সোয়াগবাক্সের মতোই একটা প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি সার্ভে করে, ভিডিও দেখে, ইমেইল পড়ে এবং আরও কিছু ছোটখাটো কাজ করে টাকা আয় করতে পারবেন। এখানে অ্যাকাউন্ট খোলাও খুব সহজ। শুধু অনলাইনে তাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সাইন আপ করতে হবে এবং নিজের প্রোফাইলটা পূরণ করতে হবে।
কিছু কাজ হয়তো একটু বেশি সময় নিতে পারে, তবে বেশিরভাগ কাজই খুব তাড়াতাড়ি করা যায় এবং তেমন বেশি পরিশ্রমও লাগে না। এই সাইটে কাজ করার জন্য কোনো বিশেষ দক্ষতার প্রয়োজন নেই। তবে এখানে অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হলে আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
তারা সাধারণত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সার্ভে দিয়ে থাকে, যেমন – নতুন কোনো পণ্য পরীক্ষা করা, আপনার জীবনযাপন কেমন, বিনোদন বা কেনাকাটার অভ্যাস ইত্যাদি। আপনি চাইলে প্রতিদিন অনেকগুলো সার্ভে ও অন্যান্য কাজ করতে পারবেন। প্রতিটা সার্ভের জন্য আপনি সাধারণত ০.৫০ ডলার থেকে ৫ ডলার পর্যন্ত পেতে পারেন, তবে কিছু বিশেষ কাজে এর চেয়েও বেশি টাকা পাওয়ার সুযোগও থাকে।
আপনার অ্যাকাউন্টে যখন কিছু টাকা জমবে, তখন আপনি সেটা গিফট কার্ড, সরাসরি চেক অথবা ক্যাশের মাধ্যমে তুলে নিতে পারবেন। যারা তাদের ফাঁকা সময়ে সহজে কিছু টাকা আয় করতে চান, তাদের জন্য ইনবক্সডলার্স সত্যিই একটা ভালো বিকল্প হতে পারে।
৩. পাইনকোন রিসার্চ (Pinecone Research)
পাইনকোন রিসার্চ নিঃসন্দেহে খুব বিশেষ একটি প্ল্যাটফর্ম। এটা মূলত বেশি আয়ের সুযোগ এবং বিভিন্ন পণ্য পরীক্ষা করার সুযোগের জন্য পরিচিত। তবে এখানে চাইলেই যে কেউ যোগ দিতে পারে না। আপনাকে প্রথমে তাদের ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে এবং তারা যদি আপনাকে গ্রহণ করে, তবেই আপনি কাজ করতে পারবেন।
তাদের সার্ভেগুলো সাধারণত খুব সহজ হয় এবং এক একটা করতে ৫ থেকে ১০ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। তবে হ্যাঁ, বেশিরভাগ সার্ভেতে অংশ নেওয়ার জন্য আপনাকে কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতার (যেমন বয়স, পেশা, কোথায় থাকেন ইত্যাদি) সঙ্গে মিলতে হবে। তাদের সার্ভেগুলো মূলত আমরা দৈনন্দিন জীবনে যে জিনিসগুলো ব্যবহার করি, বিভিন্ন বিজ্ঞাপন এবং আমাদের জীবনযাত্রার পছন্দ নিয়ে হয়ে থাকে।
যারা এই প্ল্যাটফর্মে কাজ করেন, তারা সাধারণত মাসে কয়েকটা সার্ভে পান এবং প্রতি সার্ভেতে প্রায় ৩ ডলারের মতো আয় করেন। এই টাকা পেপাল বা বিভিন্ন গিফট কার্ডের মাধ্যমে তোলা যায়। যদি আপনি আপনার মতামত জানাতে আগ্রহী হন এবং নিয়মিত সার্ভে করার সুযোগ চান, তাহলে পাইনকোন রিসার্চ আপনার জন্য সত্যিই একটা চমৎকার বিকল্প হতে পারে।
৪. টলুনা ইনফ্লুয়েন্সারস (Toluna Influencers)
আপনার যদি এমন একটা প্ল্যাটফর্মের খোঁজ থাকে যেখানে আপনার মতামত সরাসরি বিভিন্ন নতুন পণ্য এবং ব্র্যান্ড তৈরিতে সাহায্য করবে, তাহলে টলুনা ইনফ্লুয়েন্সারস একটা নির্ভরযোগ্য বিকল্প হতে পারে। এখানে যোগ দেওয়া বেশ সহজ – শুধু একটা অ্যাকাউন্ট তৈরি করে আপনার প্রোফাইলটা পূরণ করতে হবে।
এই প্ল্যাটফর্মে প্রায়ই অনেক সার্ভে করার সুযোগ আসে, তবে কিছু সার্ভে হয়তো অন্য প্ল্যাটফর্মের তুলনায় একটু বেশি সময় নিতে পারে বা কিছুটা বেশি মনোযোগের প্রয়োজন হতে পারে। সাধারণত, ব্যবহারকারীরা প্রতি সপ্তাহে কয়েকটা সার্ভেতে অংশ নিতে পারেন। এই সার্ভেগুলোর বিষয়বস্তু বিভিন্ন পণ্য, ব্র্যান্ড, সাম্প্রতিক ঘটনা এবং মানুষের কেনাকাটার অভ্যাস নিয়ে হয়ে থাকে।
আপনি যত বেশি সার্ভে সম্পন্ন করবেন, তত বেশি পয়েন্ট অর্জন করবেন। এই পয়েন্টগুলো পরে বিভিন্ন আকর্ষণীয় পুরস্কারের জন্য ব্যবহার করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, প্রতি ৩,০০০ পয়েন্টের বিনিময়ে সদস্যরা ১ ডলার পেপাল ক্যাশ অথবা বিভিন্ন গিফট কার্ড নিতে পারেন।
৫. ইউগভ (YouGov)
ইউগভ সত্যিই একটা খুব পরিচিত এবং সম্মানজনক গবেষণা সংস্থা। তারা মূলত রাজনীতি, বিভিন্ন কোম্পানি এবং সাধারণ মানুষের মতামত নিয়ে সার্ভে করে থাকে। এখানে অ্যাকাউন্ট খোলার পর, তারা আপনাকে বিভিন্ন সময়ে সার্ভের মাধ্যমে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে এবং আপনার উত্তর চাইবে।
সার্ভে যত বড় হবে, আপনি তত বেশি ইউগভ পয়েন্ট পাবেন, যা পরে গিফট কার্ড বা পেপালের মাধ্যমে টাকায় পরিবর্তন করা যায়। তাদের বেশিরভাগ সার্ভেই খুব সহজ হয় এবং বেশি সময়ও লাগে না। এখানে কাজ শুরু করার জন্য আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে, এছাড়া অন্য কোনো বিশেষ যোগ্যতার দরকার নেই।
সাধারণত, ব্যবহারকারীরা প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ৩টা সার্ভে পেয়ে থাকেন এবং প্রতি সার্ভেতে প্রায় ১ থেকে ৩ ডলার আয় করতে পারেন। যারা রাজনীতি এবং সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে নিজেদের মতামত জানাতে আগ্রহী, তাদের জন্য ইউগভ একটা খুবই ভালো প্ল্যাটফর্ম।
৬. সার্ভে জাঙ্কি (Survey Junkie)
সার্ভে জাঙ্কি অনলাইন সার্ভে করার জগতে একটা বেশ পরিচিত নাম। যদিও তারা মূলত সার্ভে করার সুযোগই বেশি দিয়ে থাকে, তবে কিছু নির্দিষ্ট ব্যবহারকারীর জন্য তারা বিভিন্ন পণ্য পরীক্ষা করার এবং ফোকাস গ্রুপে অংশ নেওয়ার সুযোগও দিয়ে থাকে।
এখানে কাজ শুরু করতে হলে, প্রথমে বিনামূল্যে একটা অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। এরপর নিজের প্রোফাইলটা ভালোভাবে পূরণ করতে হবে, যাতে আপনার জন্য উপযুক্ত সার্ভেগুলো খুঁজে পাওয়া যায়। একবার প্রোফাইল তৈরি হয়ে গেলে, আপনি সার্ভে করে পয়েন্ট আয় করা শুরু করতে পারবেন।
তাদের বেশিরভাগ সার্ভে সাধারণত ৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এখানে কাজ করার জন্য বিশেষ কোনো যোগ্যতার প্রয়োজন নেই, শুধু আপনার বয়স কমপক্ষে ১৬ বছর হতে হবে এবং আপনাকে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা অথবা অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দা হতে হবে। তারা বিভিন্ন ধরনের বিষয়ের উপর সার্ভে করে থাকে, যেমন – কেনাকাটা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রযুক্তি এবং বিনোদন সহ আরও অনেক কিছু।
ব্যবহারকারীরা সাধারণত প্রতিদিন অনেকগুলো সার্ভেতে অংশ নেওয়ার সুযোগ পান। তবে আপনি কতগুলো সার্ভে পাবেন, তা নির্ভর করে আপনার প্রোফাইলের তথ্যের সাথে ক্লায়েন্টদের কী ধরনের লোক দরকার তার উপর। যখন আপনার অ্যাকাউন্টে ৫ ডলার জমা হবে, তখন আপনি পেপাল, সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার অথবা বিভিন্ন ই-গিফট কার্ডের মাধ্যমে সেই টাকা তুলতে পারবেন।
৭. প্রোলিফিক (Prolific)
প্রোলিফিক যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম, যা মূলত বিভিন্ন শিক্ষাবিদদের গবেষণার জন্য ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য সাধারণ সার্ভে সাইটের মতো নয়, প্রোলিফিক প্রায়শই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মনোবিজ্ঞান, মানুষের আচরণ এবং সামাজিক গবেষণা করার জন্য অংশগ্রহণকারীদের সাথে যুক্ত করে।
এখানে অ্যাকাউন্ট তৈরি করার জন্য আপনাকে খুব বিস্তারিত একটি প্রোফাইল বানাতে হবে। এর ফলে আপনি শুধুমাত্র সেই গবেষণাগুলোর সঙ্গেই যুক্ত হবেন যেগুলোর জন্য আপনি উপযুক্ত।
এই সাইটটি বেশ চিন্তামূলক এবং আকর্ষণীয় সার্ভে দিয়ে থাকে, তবে এগুলো হয়তো অন্যান্য সাইটের মতো ঘন ঘন আসে না। এখানে অংশগ্রহণকারীদের সাধারণত প্রতি ঘন্টায় ৬ থেকে ১০ ডলারের আয় করার সুযোগ থাকে, এবং কিছু গবেষণায় এর চেয়েও বেশি অর্থ প্রদান করা হয়।
প্রোলিফিকের অনেক সার্ভেতেই ভালো মানের উত্তর নিশ্চিত করার জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম আছে, তাই সততা এবং খুঁটিনাটির দিকে মনোযোগ দেওয়া এখানে খুবই জরুরি। আপনি পেপালের মাধ্যমে আপনার আয় করা টাকা তুলতে পারবেন।
৮. ব্রান্ডেড সার্ভেজ (Branded Surveys)
ব্রান্ডেড সার্ভেজের মাধ্যমে আপনি ভোক্তা বিষয়ক সার্ভে পূরণ করার বিনিময়ে পয়েন্ট অর্জন করতে পারেন। সাইনআপ প্রক্রিয়াটি একটি প্রোফাইল তৈরি করা এবং জনসংখ্যা বিষয়ক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতোই সহজ। এরপরেই আপনি কাজ শুরু করতে পারবেন।
বেশিরভাগ সার্ভে ১০ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে শেষ হয় এবং প্ল্যাটফর্মটি শুরু করার আগে আনুমানিক সময় ও পুরস্কারের পরিমাণ জানিয়ে দেয়।
বিষয়গুলির মধ্যে ভোক্তা পণ্য ও পরিষেবা থেকে শুরু করে বিনোদন ও ভ্রমণ পছন্দ পর্যন্ত বিস্তৃত, যেখানে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী প্রতি সার্ভেতে ০.৫০ ডলার থেকে ১.৫০ ডলার আয় করে। একবার আপনি $৫ ডলারে পৌঁছালে, পেপাল, সরাসরি জমা অথবা গিফট কার্ডের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারবেন।
৯. লাইফপয়েন্টস (LifePoints)
লাইফপয়েন্টস একটা বেশ পরিচিত সার্ভে করার ওয়েবসাইট, যার পেছনে রয়েছে মার্কেট রিসার্চ কোম্পানি লাইটসপিড। এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন ধরনের সার্ভেতে অংশ নিয়ে পয়েন্ট আয় করার সুযোগ দেয়, যা পরবর্তীতে বিভিন্ন পণ্য তৈরি এবং ব্র্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে।
এখানে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে প্রথমে একটা বিস্তারিত প্রোফাইল পূরণ করতে হবে। এই প্রোফাইল আপনার সম্পর্কে তথ্য নেবে এবং সেই অনুযায়ী আপনাকে উপযুক্ত সার্ভেগুলোর সাথে মেলানো হবে। এক একটা সার্ভে করতে সাধারণত ৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় লাগে।
এখানে কাজ করার জন্য আপনার বয়স ১৪ বছর বা তার বেশি হতে হবে এবং আপনাকে একটি উপযুক্ত দেশে বসবাস করতে হবে, এছাড়া অন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। লাইফপয়েন্টসের সার্ভেগুলো বিভিন্ন ভোক্তা-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে হয়ে থাকে, যেমন – খাবার ও প্রযুক্তি থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা এবং আপনার ঘরোয়া অভ্যাস পর্যন্ত।
আপনি কতগুলো সার্ভে পাবেন, তা আপনার প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে, তবে যারা নিয়মিত কাজ করেন তারা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই অনেকগুলো সার্ভের আমন্ত্রণ পান।
প্রতিটি সার্ভের জন্য আপনি কয়েক সেন্ট থেকে শুরু করে কয়েক ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারেন। আর এই পয়েন্টগুলো পেপাল, অ্যামাজন এবং অন্যান্য বিভিন্ন রিটেইল গিফট কার্ডের মাধ্যমে পরিবর্তন করার সুযোগ আছে।
১০. ইউজার ইন্টারভিউস (User Interviews)
যদি আপনার হাতে একটু বেশি সময় থাকে, তাহলে ইউজার ইন্টারভিউসের মাধ্যমে বেশি টাকা আয় করার সুযোগটা বেশ কাজের হতে পারে। এই ওয়েবসাইট, যারা বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে এবং বিশেষ কিছু পেশায় আছেন, তাদের জন্য আলাদাভাবে এক-একজনের সাক্ষাৎকার, কোনো কিছু কতটা সহজে ব্যবহার করা যায় তা পরীক্ষা করা এবং দলগত আলোচনায় (ফোকাস গ্রুপ) অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়।
এখানে অ্যাকাউন্ট খোলা একদম ফ্রি, তবে আপনাকে একটা বিস্তারিত প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এর ফলে তারা আপনাকে সেই গবেষণাগুলোর সাথে মেলাতে পারবে যেগুলোর জন্য আপনি উপযুক্ত। কিছু কাজের জন্য হয়তো বিশেষ কোনো বিষয়ে আপনার কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, তবে অনেক কাজ সাধারণ মানুষের জন্যও উন্মোক্ত থাকে।
এই কাজগুলোতে কতটা সময় দিতে হবে তা একেক রকম হয় – কোনোটা ২০ মিনিটের, আবার কোনোটা ২ ঘণ্টা পর্যন্ত চলতে পারে। যেহেতু এই কাজগুলোতে বেশি সময় দিতে হয়, তাই এর বিনিময়ে আপনি ভালো টাকাও পেতে পারেন।
সাধারণত, এই ধরনের সার্ভেগুলোর জন্য ৪০ ডলার থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত দেওয়া হয়, যা গিফট কার্ড বা সরাসরি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হতে পারে।
সার্ভে করে ইনকাম করার টিপস
সার্ভে করে ভালো টাকা আয় করতে হলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিয়মিতভাবে কাজ করা এবং আপনি কোন সাইটে সময় দিচ্ছেন সে বিষয়ে অবগত থাকা। বেশি সুযোগ পাওয়ার জন্য আপনি একাধিক বিশ্বস্ত সার্ভে সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।
যেহেতু বেশিরভাগ সার্ভের প্রস্তাব আপনার ব্যক্তিগত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে আসে, তাই আপনার প্রোফাইলটি বিস্তারিতভাবে পূরণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে একটা নির্দিষ্ট সময় বের করে সার্ভে করার পাশাপাশি, সেই সুযোগগুলোর দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত যা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আয় এনে দেবে।
যদিও অনেক নির্ভরযোগ্য সার্ভে সাইট আছে, তবুও ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার আগে যেকোনো সাইট সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত।
মনে রাখবেন, কোনো সাইটেরই আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র বা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মতো সংবেদনশীল তথ্য চাওয়া উচিত নয়। অনেক সাইট তাদের ব্যবহারকারীদের নতুন বন্ধু বা পরিচিতদের যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে এবং এর জন্য তারা কিছু বাড়তি টাকা বা বোনাসও দিয়ে থাকে, যা আপনার আয় বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।
সার্ভে করে আয় নিয়ে শেষ কথা
যদি আপনার ইন্টারনেট সংযোগ থাকে এবং হাতে কিছু অবসর সময় থাকে, তাহলে সার্ভে করে বাড়তি কিছু টাকা আয় করা সত্যিই খুব সহজ একটা উপায়। যদিও এটা হয়তো আপনার পুরো মাসের খরচ চালানোর মতো যথেষ্ট হবে না, তবে বেশিরভাগ সার্ভে সাইটই আপনাকে কম পরিশ্রমে কিছু আয় করতে সাহায্য করতে পারে।
আপনি যদি নিয়মিতভাবে কাজ করেন এবং কোন সার্ভেগুলো আপনার জন্য বেশি লাভজনক তা বেছে নিতে পারেন, তাহলে প্রতি মাসে ভালো একটা অ্যামাউন্ট আয় করা সম্ভব।
সার্ভে করে ইনকাম নিয়ে প্রশ্নোত্তর
কোন সার্ভে সাইটগুলো টাকা দেয়?
অনলাইনে এমন অনেক সার্ভে সাইট আছে যারা পেপাল বা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা তোলার সুযোগ দিয়ে থাকে। এর পাশাপাশি গিফট কার্ডের মতো বিকল্পও থাকে। সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং উল্লেখযোগ্য কিছু সাইট যারা সরাসরি টাকা দেয়, সেগুলো হলো:
- সোয়াগবাক্স (Swagbucks): এরা পেপালের মাধ্যমে সরাসরি টাকা দেয়। এদের সর্বনিম্ন পেআউটের পরিমাণ সাধারণত ১ থেকে ৫ ডলারের মধ্যে হয়ে থাকে।
- ইনবক্সডলার্স (InboxDollars): এই সাইটটি চেকের মাধ্যমে পেমেন্ট করে, যা সরাসরি টাকাই। এদের সর্বনিম্ন পেআউটের পরিমাণ ৩০ ডলার।
- পাইনকোন রিসার্চ (Pinecone Research): এটি পেপালের মাধ্যমে সরাসরি টাকা প্রদান করে এবং এদের সার্ভেগুলোর মূল্য সাধারণত অন্যান্য সাইটের তুলনায় বেশি হয়ে থাকে।
তবে এটা মনে রাখা জরুরি যে, পেমেন্ট সবসময় সাথে সাথেই হয় না। বেশিরভাগ প্ল্যাটফর্মে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা হলেই টাকা তোলার সুযোগ পাওয়া যায়। তাই সাইন আপ করার আগে প্রতিটি সাইটের পেমেন্ট প্রক্রিয়া ভালোভাবে জেনে নেওয়া দরকার, যাতে আপনার পছন্দ এবং সুবিধার সাথে সেটা সঙ্গতিপূর্ণ হয়।
কোন সার্ভে সাইট বেশি টাকা দেয়?
বেশিরভাগ অনলাইন সার্ভে সাধারণত প্রতিটিতে ১ থেকে ৫ ডলারের মধ্যে পেমেন্ট করে থাকে। তবে কিছু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে, যেখানে আপনি এর চেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করতে পারেন। পাইনকোন রিসার্চ প্রায়শই বেশি অর্থ প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত।
তবে এটা মনে রাখা খুবই জরুরি যে, বেশি অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত সার্ভেগুলোতে বেশি সময় দিতে হয় এবং মনোযোগও বেশি প্রয়োজন হয়।
এছাড়াও, যেসব সাইট বেশি পেমেন্ট করে, তারা প্রায়শই নির্দিষ্ট জনমিতি (যেমন বয়স, লিঙ্গ, বসবাসের স্থান) অথবা বিশেষ পেশাগত অভিজ্ঞতাসম্পন্ন উত্তরদাতা খুঁজে থাকে। তাই, আপনি যদি সেই নির্দিষ্ট শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে বেশি আয়ের সুযোগ পেতে পারেন।
সার্ভে করে কত টাকা আয় করা যায়?
যারা নিয়মিতভাবে সময় দেন এবং বিশ্বস্ত সার্ভে ওয়েবসাইটগুলোতে কাজ করেন, তাদের পক্ষে প্রতি মাসে ৫০ ডলার থেকে ৩০০ ডলার পর্যন্ত আয় করা সম্ভব। একাধিক প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হলে আয়ের সম্ভাবনা আরও বাড়ে।
তবে শুধুমাত্র সার্ভে করে পূর্ণকালীন আয়ের সংস্থান করা বেশিরভাগ মানুষের জন্যই কঠিন। কিন্তু হ্যাঁ, এটি নিঃসন্দেহে আপনার অতিরিক্ত কিছু খরচ মেটানোর জন্য একটি চমৎকার উপায়।
কিভাবে বেশী আয় করা যায়?
- একাধিক বিশ্বস্ত সার্ভে সাইটে নিবন্ধন করুন।
- যেসব সার্ভে বেশি অর্থ প্রদান করে, সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিন।
- যদি কোনো সাইটে বন্ধু বা পরিচিতদের যুক্ত করার (রেফারেল) সুযোগ থাকে, তবে তা কাজে লাগান।
- আপনার প্রোফাইলটি সম্পূর্ণভাবে এবং সঠিকভাবে পূরণ করুন।
- যখনই নতুন কোনো সার্ভের আমন্ত্রণ আসে, দ্রুত সাড়া দিন।
যারা একটু পরিকল্পনা করে এবং কৌশলগতভাবে সার্ভে করার সুযোগগুলো গ্রহণ করে, তারাই সাধারণত সবচেয়ে ভালো টাকা ইনকাম করে।