শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ না বিদআত?
শবে বরাত (১৫ শাবানের রাত) নিয়ে মুসলিম সমাজে নানা বিতর্ক রয়েছে। কেউ একে বিশেষ ফজিলতের রাত মনে করেন এবং ইবাদতে কাটান, আবার কেউ এটিকে বিদআত বলে মনে করেন।
কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে এই রাতের গুরুত্ব এবং শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ না বিদআত, তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
শবে বরাতের ফজিলত সম্পর্কে কুরআন ও সহীহ হাদিস
শবে বরাত রাত্রির বিশেষ মাগফিরাত
‘‘মহান আল্লাহ মধ্য শাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন।’’
এ বিষয়টি সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, এ রাত্রিটি একটি বরকতময় রাত এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করেন।
কিন্তু এ ক্ষমা অর্জনের জন্য শিরক ও বিদ্বেষ বর্জন ব্যতীত অন্য কোনো আমল করার প্রয়োজন আছে কি না তা এই হাদীসে উল্লেখ নেই।
শবে বরাতের রাত্রীতে ভাগ্য লিখন
কিছু কিছু হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ রাত্রিতে ভাগ্য অনুলিপি করা হয় বা পরবর্তী বছরের জন্য হায়াত-মউত ও রিযক ইত্যাদির অনুলিপি করা হয়।
সংক্ষেপে বলা যায় যে, এ অর্থে বর্ণিত হাদীসগুলো অত্যন্ত দুর্বল অথবা বানোয়াট। এ অর্থে কোনো সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণিত হয় নি।
শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ না বিদআত?
বিদআত অর্থ হলো ইসলামে এমন নতুন কিছু সংযোজন করা যা রাসূল (সা.) এবং সাহাবাদের যুগে ছিল না।
- বিশেষ নামাজ ও নির্দিষ্ট আমল: শবে বরাত উপলক্ষে ১০০ রাকাত নামাজ, নির্দিষ্ট দোয়া, কবর জিয়ারতের বাধ্যতামূলক বিধান, বা সারারাত নির্দিষ্টভাবে ইবাদত করা বিদআত হবে। কারণ, রাসূল (সা.) বা সাহাবারা কখনো এই রাতে বিশেষ কোনো আমলকে ফরজ বা সুন্নত হিসেবে পালন করেননি।
- সামাজিক আয়োজন ও বিশেষ উৎসব: হালুয়া-রুটি বিতরণ, আলোকসজ্জা, আতশবাজি, মসজিদে জমায়েত ইত্যাদি সংস্কৃতি ইসলামের মৌলিক শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এসব কাজ বিদআত হিসেবে গণ্য হবে।
কিভাবে শবে বরাত পালন করা উচিত?
ব্যক্তিগতভাবে নফল ইবাদত করা (তাহাজ্জুদ, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইস্তিগফার) – জায়েজ। বিশেষ নামাজ ও দোয়া নির্দিষ্ট করা, সমাজে প্রচলিত বিশেষ আয়োজন করা বিদআত।
উপসংহার
কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে শবে বরাতের ফজিলত রয়েছে, তবে এই রাতে নির্দিষ্ট আমল, নামাজ, বা সামাজিক উৎসব পালন করার বিধান নেই।
অতএব, কেউ চাইলে এই রাতে ব্যক্তিগতভাবে ইবাদত করতে পারেন, তবে এটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উদযাপন করা বিদআত বলে গণ্য হতে পারে। ইসলামে প্রতিটি আমল রাসূল (সা.) এবং সাহাবাদের অনুসরণে হওয়া উচিত।
আশা করছি শবে বরাত পালন করা কি জায়েজ না বিদআত তা জানতে পেরেছেন। ইসলামিক আরও তথ্যমুলক পোস্ট পেতে এখানে ক্লিক করুন।