ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল
ইসলাম আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ঋণ থেকে মুক্তি এবং আর্থিক সচ্ছলতা লাভের জন্য কোরআন ও হাদিসে কিছু কার্যকর আমল ও দোয়ার উল্লেখ রয়েছে। যারা নিজেদের জীবনকে ঋণমুক্ত করতে এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে চান, তাদের জন্য এই আর্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ কথা
ঋণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঋণ দেয়ার মানসিকতা থাকা। আপনার ঋণ পরিশোধ থাকার ব্যবস্থা থাকলে অবশ্যই ঋণ পরিশোধ করুন।
ব্যবসার টাকা, জমিজমা বিক্রি করে হলেও ঋণ থেকে মুক্তি পেতে হবে। ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছা থাকা লাগবে।
একজন মানুষের মৃত্যুর তার রেখে যাওয়া সম্পদ দিয়ে সর্বপ্রথম যা করতে হয় তা হলো ঋণ পরিশোধ। শরিয়ত গুরুত্ব দিয়েছে ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে।
ঋণমুক্তির জন্য কোরআনী দোয়া
ঋণমুক্তির জন্য একটি বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা মহানবী মুহাম্মদ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন। আপনি নিয়মিত এই দোয়াটি পড়তে পারেন:
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ: “আল্লাহুম্মাক্ফিনী বিহালালিকা আন্হারামিকা, ওয়া আগ্নিনী বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।”
অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার হালাল জিনিস দ্বারা যথেষ্ট করুন হারাম থেকে আমাকে বাঁচিয়ে রাখুন এবং আপনার অনুগ্রহ দ্বারা আমাকে সকলের উপর নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করুন।”
নিয়মিত এই দোয়া পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। এটি আপনার ঋণমুক্তির পথে সহায়ক হবে।
এছাড়াও নিজের ভাষায় দোয়া করুনঃ যেমন আল্লাহ আপনি সাহায্য করুন, আল্লাহ সহজ করে দিন, আল্লাহ আমাকে ধৈর্য দিন। আল্লাহ আপনি আমার ঋণ পরিশোধ করে দেন, আল্লাহ আপনি ব্যবস্থা করে দেন।
সূরা আল-ওয়াকিয়া পড়ার ফজিলত
বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সুরা ওয়াকিয়াহ তেলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না।’ (বাইহাকি, শুআবুল ঈমান; হাদিস, ২৪৯৮)
তাই প্রতিদিন ইশার নামাজের পর সূরা আল-ওয়াকিয়া পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি আর্থিক সচ্ছলতা অর্জনের একটি শক্তিশালী আমল।
আয়াতুল কুরসি পড়ার গুরুত্ব
আয়াতুল কুরসি পড়া শুধুমাত্র সুরক্ষার জন্য নয়, বরং আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভের জন্য অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়ুন। এটি আপনার জীবনে শান্তি এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে আসবে।
ইস্তিগফার পড়ার উপকারিতা
ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আমাদের ভুলগুলো মাফ চাওয়া হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, মহান আল্লাহ তাকে সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ )
ইস্তিগফার:
أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
উচ্চারণ: “আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি।”
অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি।”
প্রতিদিন নিয়মিত ইস্তিগফার পড়ুন। এটি আপনার জীবনে আশীর্বাদ এবং আর্থিক উন্নতি নিয়ে আসবে।
সদকা ও দানের ফজিলত
ইসলামে সদকা করার গুরুত্ব অপরিসীম। রাসূল (সা.) বলেছেন, সদকা সম্পদ বৃদ্ধি করে এবং দারিদ্র্য দূর করে। আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী নিয়মিত সদকা করুন। এটি শুধু আপনাকে আর্থিক সচ্ছলতা দেবে না, বরং আল্লাহর রহমত লাভের অন্যতম উপায়।
বাস্তব জীবনের পরামর্শ
১. পরিশ্রম করুন: হালাল পথে আয়ের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ইসলামে পরিশ্রমকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
২. অতিরিক্ত খরচ বন্ধ করুন: বাজেট তৈরি করে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়িয়ে চলুন।
৩. ঋণ পরিষদের পরিকল্পনা করুন: ছোট ছোট কিস্তিতে হলেও ঋণ শোধের ইচ্ছা প্রকাশ করুন।
৪. আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন: সবকিছুর মূলে আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
উপসংহার
ঋণ থেকে মুক্তি এবং কোটিপতি হওয়ার কোরআনী আমল মেনে চলা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরোক্ত দোয়া ও আমলগুলো নিয়মিতভাবে পালন করুন এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন। একইসঙ্গে হালাল উপায়ে পরিশ্রম ও দান-সদকার মাধ্যমে নিজের জীবনে বরকত আনুন। ইনশাআল্লাহ, আপনি আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করতে পারবেন।