সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা, পুষ্টিগুণ ও ঔষধি গুণ জানুন
সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা জানুন—কোলেস্টেরল কমানো, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, সংক্রমণ প্রতিরোধ ও হাড় মজবুত করতে কীভাবে কাজ করে এই পুষ্টিকর বীজ।
সাদা তিল আমাদের আশেপাশে সহজলভ্য হলেও এর স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই অবগত নই। প্রাচীনকাল থেকেই এই তেলবীজজাত ফসলটি মানুষ ব্যবহার করে আসছে শুধু রান্নায় স্বাদ বাড়ানোর জন্য নয়, বরং একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্য রক্ষাকারী উপাদান হিসেবেও।
সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা
আজ আমরা জানব সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে, যা শরীরের নানা দিক থেকে উপকারে আসে।
১. কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
সাদা তিলে রয়েছে লিগনান ও ফাইটোস্টেরল নামে দুটি প্রাকৃতিক উপাদান যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, তিলের বীজে অন্য যেকোনো সাধারণ বাদাম ও বীজের তুলনায় সর্বোচ্চ পরিমাণে ফাইটোস্টেরল (২০২ মিলিগ্রাম প্রতি আউন্স) থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
২. দেহকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে
সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হলো এটি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তিলের মধ্যে থাকা সেসামিন ও সেসামলিন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি স্ট্যাফ ইনফেকশন, স্ট্রেপ থ্রোট এবং অ্যাথলেটস ফুট জাতীয় ছত্রাকঘটিত সংক্রমণের বিরুদ্ধেও কার্যকর।
৩. মুখগহ্বরের যত্নে কার্যকর
তিল তেল দিয়ে অয়েল পুলিং (তেল দিয়ে কুলি করা) একটি প্রাচীন ও কার্যকর পদ্ধতি যা মুখের ব্যাকটেরিয়া দূর করে ও দাঁতের প্ল্যাক কমায়। নিয়মিত সকালে খালি পেটে সাদা তিলের তেল দিয়ে কুলি করলে মুখের দুর্গন্ধ ও দাঁতের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
৪. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা তিলের তেল টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ওষুধের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান রক্তে চিনির মাত্রা হ্রাস করে এবং রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সাদা তিল খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
৫. ক্যানসার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে
সাদা তিলে রয়েছে সেসামল নামক একটি গুরুত্বপূর্ণ যৌগ, যা অ্যান্টি-মিউটেজেনিক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, এবং কেমোপ্রিভেন্টিভ বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং কোষের সঠিক সময়ে মৃত্যু ঘটাতে সাহায্য করে। যদিও আরও গবেষণার প্রয়োজন, তবুও এটি ক্যানসার প্রতিরোধে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখতে পারে।
পুষ্টিগুণে ভরপুর সাদা তিল
সাদা তিলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ভিটামিন। প্রতি আউন্স (প্রায় ২৮ গ্রাম) সাদা তিলে পাওয়া যায়:
- ক্যালোরি: ১৬২
- প্রোটিন: ৫ গ্রাম
- ফ্যাট: ১৪.১ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ৬.৬ গ্রাম
- ফাইবার: ৩.৩ গ্রাম
- কপার: ১২৯% দৈনিক চাহিদার
- ক্যালসিয়াম,
- ম্যাঙ্গানিজ,
- ফসফরাস,
- ম্যাগনেসিয়াম,
- আয়রন,
- জিঙ্ক,
- সেলেনিয়াম এবং
- ভিটামিন বি১।
এই উপাদানগুলো হাড়ের গঠন মজবুত করতে, রক্ত তৈরিতে, হরমোন নিঃসরণে এবং স্নায়ু সংকেত পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কিছু সাবধানতা
যদিও সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা অনেক, তবে যাদের তিলজাত দ্রব্যে অ্যালার্জি আছে তাদের জন্য এটি ক্ষতিকর হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে এটি ইসকেমিয়া (রক্তপ্রবাহে বাধা) বা আন্তরিক ছিদ্র ঘটাতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।
কিভাবে খাওয়া যায় সাদা তিল?
সাদা তিল কাঁচা, ভাজা বা বেক করে খাওয়া যায়। এটি দিয়ে বানানো হয় তাহিনি, যা হুমাস তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এটি ব্যবহার করা যায়:
- সালাদে ছিটিয়ে
- রুটি, বান ও বিস্কুটের উপরে
- পিঠা, মিষ্টান্ন ও নানান ভাজা খাবারে
অনেকে মনে করেন, গাঢ় রঙের তিলের স্বাদ বেশি হলেও, সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা এর পুষ্টিগুণে একেবারেই কম নয়।
উপসংহার
সাদা তিল শুধুমাত্র একটি সাধারণ বীজ নয়; এটি স্বাস্থ্য ও পুষ্টির একটি চমৎকার উৎস। কোলেস্টেরল হ্রাস, সংক্রমণ প্রতিরোধ, দাঁতের যত্ন, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যানসার প্রতিরোধ—সবক্ষেত্রেই সাদা তিল খাওয়ার উপকারিতা প্রমাণিত। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় পরিমাণমতো তিল যুক্ত করলে আপনি উপকৃত হবেন নিশ্চিতভাবেই।