স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

শরীর ফিট রাখার ১০টি উপায় জেনে নিন

জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাস আপনার মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি আপনার জীবনের মান উন্নত করতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এখানে শরীর ফিট রাখার ১০টি উপায় দেওয়া হলো:

সুস্থ জীবনযাপন কোনো অলৌকিক ঘটনা নয়, বরং কিছু সচেতন সিদ্ধান্তের সমষ্টি। যদিও বয়স, পারিবারিক ইতিহাস আর জিনগত গঠন আমাদের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে এবং কিছু রোগের ঝুঁকি বাড়ায়, তবুও আমাদের হাতে এমন অনেক কিছুই আছে যা নিয়ন্ত্রণ করে আমরা একটি দীর্ঘ, কর্মক্ষম ও সুস্থ জীবন পেতে পারি।

শরীর ফিট রাখার ১০টি উপায়

আসুন, তেমন ১০টি বিজ্ঞান-সমর্থিত শরীর ফিট রাখার ১০টি উপায় নিয়ে আলোচনা করা যাক:

১. সচল থাকুন

যদি প্রাণবন্ত, উদ্যমী আর ভালো মেজাজ চান, তাহলে শরীরকে সচল রাখুন। নিয়মিত ব্যায়াম শুধু আপনার শরীর নয়, মনের স্বাস্থ্যকেও বহুভাবে উন্নত করে। এর জন্য রোজ জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানো বা ম্যারাথন দৌড়ানোর প্রয়োজন নেই।

প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের মাঝারি ধরনের ব্যায়াম, যেমন দ্রুত হাঁটা, সাইকেল চালানো কিংবা ঘরের ছোটখাটো কাজও আপনার স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ট উপকারী।

নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়, মন ভালো রাখে, ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, হাড় ও পেশী শক্তিশালী করে এবং ডায়াবেটিস ও কিছু ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকিও কমিয়ে আনে।

আরও পড়ুনঃ  শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য কী কী করতে পারি?

২. প্রাকৃতিক খাবার খান

প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে বেশি করে প্রাকৃতিক ও সম্পূর্ণ খাবার গ্রহণ করুন। এই খাবারগুলোতে কৃত্রিম রং, রাসায়নিক বা অতিরিক্ত চিনি-লবণ থাকে না।

ফল, সবজি, শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আপনার শরীরকে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও পুষ্টি যোগায়, যা আপনাকে আরও শক্তি দেয় এবং বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।

প্রক্রিয়াজাত খাবারে থাকা অতিরিক্ত চিনি, লবণ ও অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট ওজন বৃদ্ধি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

৩. ধূমপানকে বিদায় বলুন

ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, এ কথা নতুন নয়। এটি প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর প্রধান কারণ। ধূমপান আপনার শরীরের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে এবং হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে তোলে। ধূমপান ত্যাগ করা আপনার জীবনের মান উন্নত করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, তা আপনার বয়স বা ধূমপানের অভ্যাস যত দিনেরই হোক না কেন।

৪. ঘুমকে গুরুত্ব দিন

ঘুম আমাদের শরীরের প্রতিটি কার্যকলাপের জন্য অত্যাবশ্যক। ঘুমের সময় আমাদের কোষ মেরামত হয় এবং শরীর শক্তি সঞ্চয় করে। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ঘুমের পরিবেশ শান্ত ও অন্ধকার রাখুন, bedtime-এর আগে স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন এবং একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলুন।

৫. পর্যাপ্ত জল পান করুন

শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সচল রাখতে, হজমক্ষমতাকে ঠিক রাখতে এবং শরীরকে ডিহাইড্রেশন থেকে রক্ষা করতে পর্যাপ্ত জল পান করা অপরিহার্য। পর্যাপ্ত জল পান না করলে ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং মনোযোগের অভাব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ব্যায়ামের পর বা গরম আবহাওয়ায় বেশি জল পান করা উচিত। কোমল পানীয় বা এনার্জি ড্রিঙ্কের পরিবর্তে জল পান করার অভ্যাস করুন।

আরও পড়ুনঃ  ইমার্জেন্সি ডাক্তার হেল্পলাইন বিডি

৬. মদ্যপান পরিমিত করুন

মাঝে মাঝে অল্প পরিমাণে মদ্যপান হয়তো তেমন ক্ষতিকর নয়, তবে অতিরিক্ত মদ্যপান আপনার লিভার, মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। এটি কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই মদ্যপান পরিমিত করাই বুদ্ধিমানের কাজ।

৭. রোগ প্রতিরোধের উপর জোর দিন:

অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পাশাপাশি সুস্থ থাকতেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো রোগ প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে সাহায্য করে, ফলে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায় এবং জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়। আপনার বয়স ও স্বাস্থ্য ঝুঁকির উপর নির্ভর করে ডাক্তার কিছু স্ক্রিনিং টেস্টের পরামর্শ দিতে পারেন।

৮. নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে অবগত থাকুন:

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগার এবং বিএমআই-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য বিষয়ক সংখ্যাগুলো জেনে রাখা দরকার। এই সংখ্যাগুলো স্বাভাবিকের বাইরে থাকলে, আপনার ডাক্তার আপনাকে সঠিক জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শ দিতে পারেন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসার মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারেন।

৯. স্বাস্থ্যকর উপায়ে মানসিক চাপ সামলান:

মানসিক চাপ জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ, তবে দীর্ঘস্থায়ী চাপ আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম, যোগা, ধ্যান, গান শোনা বা সৃজনশীল কাজকর্মের মাধ্যমে আপনি মানসিক চাপ কমাতে পারেন।

১০. নিরাপদ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখুন

যদি আপনি যৌন সক্রিয় হন, তবে যৌনবাহিত সংক্রমণ (STI) সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং নিয়মিত পরীক্ষা করানো জরুরি। অনেক STI-এর প্রাথমিক পর্যায়ে তেমন কোনো লক্ষণ দেখা যায় না, তাই পরীক্ষা না করালে এটি অজান্তেই অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রেও দেরি হয়ে যেতে পারে। আপনার এবং আপনার সঙ্গীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখা এবং প্রয়োজনে টিকা নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুনঃ  ব্রেস্ট ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ

শেষ কথা

পরিশেষে বলা যায়, সুস্থ থাকা আপনার দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভরশীল। ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমেই আপনি একটি দীর্ঘ, সক্রিয় ও সুন্দর জীবন পেতে পারেন। আজ থেকেই এই অভ্যাসগুলো শুরু করুন এবং নিজের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

Back to top button

অ্যাডব্লকার ডিটেক্ট হয়েছে!

মনে হচ্ছে আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমাদের সাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অ্যাড ব্লকার বন্ধ করতে হবে। যদি অ্যাডব্লকার ব্যবহার না করেন, তাহলে পেজটি রিফ্রেশ করুন।